টলিউড

স্বনামধন্য অভিনেতা চিন্ময় রায়, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একাকীত্ব গ্রাস করে ফেলেছিল তাঁকে, পরে ছাদ থেকে নীচে পড়ে যান তিনি, তবে সেটা কি আত্মহত্যা ছিল না নিছক দুর্ঘটনা

চিন্ময় রায়, পর্দার টেনিদা আমাদের। টেনিদা ছাড়াও একের পর এক যুগান্তকারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনেতার জন্ম হয়েছিল ওপার বাংলার কুমিল্লায়, ১৯৪০ সালের ১৬ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। থিয়েটারই তাঁর প্রথম ভালোবাসা ছিল, ছায়াছবিতেও কাজ করেছেন পরবর্তীতে। দু’জায়গাতেই সমানভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। প্রসঙ্গত নান্দীকার গোষ্ঠীর হয়ে অভিনয় করতেন তিনি।

পরবর্তীতে ছায়াছবিতে পা রাখলেন, তাঁর প্রথম ছবির নাম ছিল ‘গল্প হলেও সত্যি’, পরিচালনায় ছিলেন তপন সিংহ। এরপরেই একের পর এক অফার আসতে থাকে অভিনেতার কাছে। অভিনয় করেছেন অনেকগুলি ছবিতে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল : ‘চারমূর্তি’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘ননীগোপালের বিয়ে’, ‘হাটেবাজারে’, ‘ঠগিনী’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘মৌচাক’, ‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’। ব্যাঙ্গাত্মক এবং কৌতুক অভিনেতা হিসেবেই তিনি পেয়েছিলেন আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা।

কাজ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সাথেও। কাজ করেছেন তাঁর ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ এবং ‘চিড়িয়াখানা’ ছবিতে। থিয়েটারের মঞ্চেও যথেষ্ট প্রভাবশালী অভিনেতা ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে অনেকটাই অসম্পূর্ণতা তৈরি হয়েছিল ফিল্ম এবং থিয়েটার ইন্ডাস্ট্রিতে।

‘ননী গোপালের বিয়ে’, এই ছবি করার সময় অভিনেত্রী জুঁই বন্দোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর দেখা। অভিনয় চলাকালীন প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তরুণ চিন্ময়। সাহস করে প্রেম নিবেদনও করেছিলেন তিনি। জুঁই বন্দোপাধ্যায়ও রাজি তাঁকে ভালোবাসতে। ব্যস তারপরেই বিয়ে হয়ে যায় তাঁদের, সাত পাঁকে বাঁধা পরেন চিন্ময় এবং জুঁই। দুটি সন্তানও হয় তাঁদের, বেশ সুখের সংসার কাটিয়েছিলেন তাঁরা।

তবে মানুষ জন্মেছে যখন তাঁকে মারাও যেতে হবে, অভিনেত্রী জুঁই বন্দোপাধ্যায়ও মারা যান, একা করে যান তাঁর সন্তান এবং স্বামীকে। আর তাঁর মৃত্যুর শোক গিলে নিয়েছিল চিন্ময়কে। নিজের সমস্ত বন্ধন ত্যাগ করতে শুরু করেছিলেন তিনি ইন্ডাস্ট্রির সাথে। মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি সেসময়ে বলাই যায়।

২০১৮ সালে তিন তলার ছাদ থেকে তাঁর পড়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লো গোটা বাংলায়। বাড়িতে শঙ্খ রায়, তাঁর ছেলে ছিলেন না সেসময়ে। ছাদে ছিলেন তিনি, তবে তারপরই দুঃসংবাদ, ছাদ থেকে পড়ে যান তিনি। প্রতিবেশীদের নজরে আসে বিষয়টি, নীচে পড়ে থাকতে দেখেন অভিনেতাকে। রক্ত বয়ে যাচ্ছে তাঁর আশেপাশে নদীর মতো, চোট পেয়েছিলেন সমস্ত শরীরে, হাতে পায়ে বুকের পাঁজরে গুরুতর আঘাত লেগেছিল তাঁর, তবে মৃত্যু তাঁকে নিয়ে যেতে পারেনি। শেষ বছরটা বেশ কষ্টকর ছিল তাঁর জন্য। পরে ২০১৯ সালে তিনি চিরতরে বিদায় জানান।

তবে অনেকের মতে প্রথমবারে মারা গেলেই ভালো হত, কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি। শেষ বছরটা ওমন কষ্টকর হবে তা জানলে কেউই বেছে থাকতে চাইবেন না। তবে কেনই বা ছাদ থেকে ওমন পড়ে গেলেন তিনি, এটা কী দুর্ঘটনা ছিল না বিফল আত্মহত্যার চেষ্টা? তা আজও জানা যায়নি। তবে এখন আশা করা যায় তিনি যেখানেই আছেন ভালো আছেন, তাঁর ভালোবাসা জুঁই বন্দোপাধ্যায়ের সাথেই আছেন।

Back to top button

Ad Blocker Detected!

Refresh