টলিউড

ইডি তলব, সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রোল সবকিছু নিয়েই মুখ খুললেন অভিনেতা বনি, ‘অন্যায় করিনি ভুল করেছি’! অকপট অভিনেতা

ইডির কাছে তলব হওয়ার পর থেকেই বনি সেনগুপ্ত(Bonny Sengupta) নামটা যেন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। আরো মারাত্মক যখন নিজের জন্য মারাত্মক এক মন্তব্য করে বসলেন তিনি। সবকিছু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া(Social Media) যখন সরগরম ঠিক তখনই মুখ খুললেন অভিনেতা। সম্প্রতি এই সময়কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন সমস্তটা।

প্রথম যখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় গাড়ি কেনার অনুভূতিটা ঠিক কেমন ছিল! সরাসরি অভিনেতা জানিয়েছেন,’বাংলা ছবির জগতে কাজ করতে আসার পর, কিছু ক্ষেত্রে চুক্তি ছাড়া কাজ করার ব্যাপারে আমি অভ্যস্ত ছিলাম। এটাই অনুভব করলাম, এরপর থেকে কাজ করলে, চুক্তি স্বাক্ষর করা জরুরি। নামী প্রযোজকরা ছাড়া, নতুন যে সব প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করবো, সেক্ষেত্রে তাঁদের সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেব। তবে সকলের সম্পর্কে ঠিক তথ্য বের করা মুশকিল’।

তবে অভিনেতাকে কি আবার ডাকা হতে পারে? সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তর,’ আমি টাকা ফেরত দিয়েছি। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে চাই না’ পাশাপাশি এক হাত নিয়ে বলেছেন যারা তার দিকে অভিযোগ করেছেন তিনি এত টাকা পারিশ্রমিক পাননা তাহলে এত টাকা ফেরত দিলেন কিভাবে! নিশ্চয়ই তার সেই ক্ষমতা রয়েছে যেটা সাদা টাকাটা ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তবে এত ঘটনার মাঝে নিরাপত্তাহীনতা বা ভয় কোনটা কাজ করেছে বনির মধ্যে? সরাসরি উত্তর,’একটা নার্ভাসনেস কাজ করছিল। ভয় বলবো না। আমি অন্যায় করিনি, ভুল করেছি। কৌশানী-বাবা-মা-আইনজীবী সকলের সঙ্গে কথা বলে, এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হব, সেটাই ঠিক করার ছিল। আমার ‘নাম’ যাতে খারাপ না হয়, সেটা নিশ্চিত করা দরকার ছিল। আমার উপার্জনের টাকা দিতে হলো বলে, আর্থিক ক্ষতি হলো’।

তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের মজা করা হচ্ছে তাকে নিয়ে, সে ব্যাপারে অবশ্য বনি জানিয়েছেন যবে থেকে তিনি ছবি জগতে পা দিয়েছেন তবে থেকেই তাকে নিয়ে ট্রোলিং হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে গা সওয়া তার।তবে যারা তাকে নিয়ে মজা করেন তাদের সম্মান করেন তিনি। কারণ অনেকের উপার্জন নির্ভর করে তার ওপর। কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে খারাপ লাগে।

পাশাপাশি নিজেকে লিডিং হিরো বলায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। যদিও বারবার হিরো হিসেবেই তিনি মুখ দেখিয়েছেন পর্দাতে। একাধিক সত্ব কেনা রয়েছে তার বিভিন্ন বিনোদন চ্যানেলের কাছে। এ ব্যাপারে অভিনেতা জানিয়েছেন,’বাংলা ছবির সঙ্গে জড়িত নায়ক-নায়িকাদের ‘ছোট’ করে দেখার একটা চল হয়ে গিয়েছে। বাংলা ছবির নায়কদের উপার্জন ‘বড়’ অঙ্কের হতে পারে না, এটাও বলা হচ্ছে। একজন বলেছেন, গাড়ির যে দাম তাতে না কি একটা বাংলা ছবি তৈরি হয়ে যাবে! জানি না, কীভাবে ৪০ লাখ টাকায় একটা বাংলা ছবি হতে পারে। বাংলা ছবিকে ‘বড়’ জায়গায় দেখতে না পারলে, ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি হবে না। আমি সে সব মানুষদের বিরোধী, যাঁরা নিজেরা শিল্পী হয়ে অন্য শিল্পীকে নীচে নামানোর চেষ্টা করেন। যে কোনও শিল্পীর ভালো বা খারাপ সময়ে, টলিউডের একজোট হওয়া দরকার’।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নায়ক নায়িকাদের উপার্জনের বড় অংশ আসে স্টেজ শো থেকে। সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুক্তিপত্র থাকে না। তবে এটা হল যে খুব একটা ভালো হবে না সেটাও বললেন বনি। তার কথা অনুযায়ী,’টলিউডে এই ঘটনার পর যদি সবাই বলেন, চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর ছাড়া কাজ হবে না, তা হলে অর্ধেকের বেশি স্টেজ শো হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের কাজ কী? একটা জায়গায় গিয়ে মুখ দেখানো। কথা বলি, গান গাই, নাচি, চলে আসি। সেখানে যার টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে, সেই মানুষটা সম্পর্কে তথ্য জানা কি আমাদের কাজ? এই ঘটনার পর আগামী দিনেও সব যে বদলে যাবে এমন নয়। তবে শিল্পীরা এবার থেকে নিশ্চয়ই সতর্ক থাকবেন’।

তার নাম সংবাদমাধ্যমে আসতেই স্বাভাবিকভাবেই নাম জড়িয়ে গিয়েছে তার বান্ধবী কৌশানির। এ ব্যাপারটা আশা করেননি তিনি। অনেকেই খবর জানার জন্য তার দোরগোড়ায় হাজির হয়েছে। তবে কৌশানিকে বুদ্ধিমান স্পষ্ট বক্তা বলেছেন। আগামী দিনে সে ভালো কাজ করবে এমনটাই বিশ্বাস করেন বনি।

মায়ের উপর যে অভিযোগ এসেছে সেটাও বিরোধীপক্ষদের চক্রান্ত বলেই মনে করছেন তিনি। সরাসরি জানিয়েছেন তার মা ইম্পার পথ থেকে সরে দাঁড়াবেন যদি তাকে ভুল প্রমাণিত করা হয়। তবে বনির মতোই আরো অনান্য অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম জড়িয়েছে কুন্তলের সঙ্গে। যদিও তাদের কাউকেই দেখেননি তিনি। এমনকি কোন তলের বাড়িতে গেলেও তার পরিবার-পরিজনকে কাউকে দেখতে পেতেন না।

তবে এত বড় ঘটনার পর তার কাজের উপর প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। হয়তো কাজ পেতেও খানিক অসুবিধা হবে। সে ব্যাপারে অবশ্য বনি বলেছেন,’টলিপাড়ায় যাঁরা আমার কাছের, তাঁরা আমার পাশে আছেন। পরিচিত প্রযোজনা সংস্থারাও তাই জানিয়েছে। ৩০ শতাংশ মানুষ, যাঁরা আমার কাছের নয়, তাঁরা কী বললেন, তাই নিয়ে ভাবছি না। অনেকেই বলেছেন, আমি খালি বড়-বড় কথা বলি, অভিনয় করতে পারি না! তাঁদের চিনে রাখলাম। দর্শকরাই প্রধান। আমার মাথা ঠান্ডা। নিজের ধৈর্য্যের জন্যই আজকে এই জায়গায় পৌঁছেছি। আমার একটা নতুন ছবির শুটিং শুরু করার কথা ২৬ মার্চ থেকে। সেটা সাতদিন পিছিয়েছি’।

পাশাপাশি নায়ক নায়িকা হলেই যে একটা আলাদা দূরত্ব থাকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সেটাও বুঝিয়ে দিলেন কথায় কথায়।একটা পার্টিতে ঢোকার সময়, যখন আমি সিয়াজ থেকে নামতাম, কেউ গুরুত্ব দিতেন না। যখন বিএমডব্লিউ বা তেমন কোনও গাড়ি থেকে নামি, সবাই ‘স্যার’ বলে এগিয়ে আসেন। প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত মানুষরাই তাই করেন! একজন নায়ক বড় গাড়িতে চড়বেন, ভালো পোশাক পরবেন, এই অভ্যাস চলে আসছে। শাহরুখ খান বড় গাড়ি থেকে নামছেন দেখলে আমার শিহরণ হতো। নিজেকে মাটির মানুষ বলে দাবি করছি, আবার আরমানি থেকে পোশাক কিনছি, এটার কোনও মানে নেই। অভিনয় পেশাটার সঙ্গে যশ-খ্যাতি জড়িয়ে থাকে। সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে যা নেই, তেমন কিছু নায়ক-নায়িকাদের করতে দেখলে, অনুরাগীরাই আপ্লুত হন। তাই এই অভ্যাসে আমি কোনও সমস্যা দেখি না।

Back to top button

Ad Blocker Detected!

Refresh