পোড়া পুতুল, ঘুঙুর থেকে শুরু করে অনামিকার হাতের দাগ সবমিলিয়ে রহস্য-রোমাঞ্চ ভরপুর লালকুঠি দেখে মুগ্ধ দর্শক, ১২ বছর আগে লালকুঠিতে ঘটেছিলো কোন মর্মান্তিক ঘটনা
গতকাল থেকে শুরু হয়েছে জি বাংলার রহস্য-রোমাঞ্চ থ্রিলার লালকুঠি। এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে দর্শকরা আবার দেশের মাটির রাজা মাম্পি অর্থাৎ রাহুল-রুকমা জুটিকে ফেরত পেয়েছেন। ধারাবাহিক শুরু হওয়ার আগে যে প্রোমো রিলিজ করেছিলো সেখান থেকেই ধারাবাহিকের মধ্যে একটা ভৌতিক পরিবেশের বিষয়ে আঁচ করা যাচ্ছিলো।
প্রথম প্রোমোতে দেখা যায়, গা ছমছমে ভৌতিক পরিবেশে রুকমা ছুটে ছুটে বেড়াচ্ছে, দ্বিতীয় প্রোমোতে দেখা যায়, রাহুল রুকমার ফার্স্ট অ্যানিভার্সারি পালন হচ্ছে আর জলের মধ্যে থেকে কোন একটা কিছু এসে রুকমার হাত চেপে ধরছে, রুকমা ভয়ার্ত আর্তনাদ করছে, তখন রাহুল এসে তাকে বাঁচাচ্ছে এবং আশ্বস্ত করছে যে, সে তার পাশে আছে।- এই দুই প্রোমো এপিসোড মানুষের মধ্যে থাকা উৎসাহকে আরো বেশি বাড়িয়ে তুলেছিল লালকুঠির প্রতি। সেই ক্ষেত্রে বলতে হয় লালকুঠির প্রথম পর্ব দর্শকদের সেই উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আগ্রহকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
২রা মে ২০২২ এ জি বাংলায় রাত সাড়ে নয়টার টেলিকাস্ট হওয়া লালকুঠির প্রথম এপিসোডে দেখা গেলো ভৌতিক আর পারিবারিক রহস্যের মিশেল। পর্বের শুরুতেই জানা যায়, ১২ বছর আগে লালকুঠিতে ঘটে গিয়েছিল একটি মর্মান্তিক ঘটনা। সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা একজন সাংবাদিককে বলতে শোনা যায়, উপরমহল থেকে বুদ্ধিজীবী মহল প্রত্যেক এই ঘটনায় তোলপাড় হয়ে উঠেছে। জোড়া খুনের তদন্তের ঘটনায় ইতিমধ্যে নেমে পড়েছে পুলিশ।-সাংবাদিকের এই কথা বলার সাথে সাথে একটি অ্যাম্বুলেন্স বেরিয়ে যায় লালকুঠি থেকে। তারপর আর কিছুই জানা যায় না।
এরপর কাহিনী এগিয়ে যায় ১২ বছর, ঘুরেফিরে আসে সেই দিনটি আর অমাবস্যার রাত। বাড়ির একজন সদস্য আগে থেকেই অনুমান করেছিল, এই দিনে কিছু একটা অঘটন ঘটবে, তার অনুমানকে সত্য করে দেখা যায় একটার পর একটা অঘটন ঘটতে থাকে লালকুঠিতে। লালকুঠির একজন বউ সন্ধ্যেবেলা “হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ” বলতে সন্ধ্যাপ্রদীপ দিচ্ছিলেন, দরজা খুলতেই আর্তনাদ করে উঠলেন তিনি। দেখতে পেলেন পোড়া একটি পুতুল ঝুলছে।
তার আর্তনাদ শুনে তার বৌমা মহুয়া নেমে এলো, সেও পোড়া পুতুলটি দেখে ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। শাশুড়ি মা তাকে বললেন, জানতাম আজ এমন কিছু একটা ঘটবে। এই পরা প্রথমটা একদম সেইরকম। এরপর শাশুড়ি মা পুতুলটি ফেলে দিয়ে বৌমাকে দরজা লাগিয়ে দিতে বলে সাথে এও বলে দেয় যে, এই পোড়া পুতুলের কথাটি কাউকে না বলতে।
চোখ বন্ধ করে পুতুলটি ছুঁড়ে ফেলার মুহূর্তেই মহুয়ার কাছে একজন ডেলিভারি বয় এলো এবং একটি পার্সেল দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। সুপ্রিয়া দস্তিদার অর্থাৎ গল্পের নায়ক বিক্রমের মায়ের নামে এসেছিল এই পার্সেলটি।
মহুয়া মনি মা অর্থাৎ সুপ্রিয়া দেবীর হাতে পার্সেলটি তুলে দেয়। পার্সেলটি খুলে তার মধ্যে একটি ঘুঙুর দেখতে পান সুপ্রিয়া দেবী। ঘুঙুরটি দেখে রীতিমতো আঁতকে ওঠেন তিনি, মহুয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয় সেটি ফেলে দিতে। এরপর বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে জানা যায় বাড়িতে কোন ডেলিভারি বয় আসেনি আবার কেউ বাড়ি থেকে বেরও হয় নি।
গা শিউরে ওঠা আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করে গোটা বাড়ি জুড়ে! এরপর দেখা যায় রায়চৌধুরীদের বাড়ির মেয়ে অনামিকা বহু বছর বিদেশ থেকে ফিরেছে। এই অনামিকার চরিত্রটি করছে রুকমা। তার বাড়ির গাড়ি এসেছে তাকে নিয়ে যেতে, মাঝরাস্তায় সে গঙ্গার ঘাটে থামে, সেখানেই বিক্রম অর্থাৎ রাহুলের সাথে পরিচয় হয় তার। বিক্রম কোন একজনের স্মৃতি ভুলতে সেই ঘাটে এসেছিল একটু নিরিবিলিতে থাকতে, অনামিকার অতিরিক্ত উৎসাহিত প্রশ্ন ও ছেলেমানুষী ভরা কথায় বিরক্ত হয় সে, বিরক্তি দেখিয়ে যখন সে চলে যাচ্ছে তখনই সে অনামিকার আর্তনাদে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে অনামিকা জলে পড়ে গেছে। অনামিকাকে উদ্ধার করবার পর অনামিকা বলে সে নিজে থেকে পড়ে নি তাকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার শ্মশানঘাটে বিক্রম আর অনামিকা ছাড়া কেউ ছিলো না!
এরপর ইচ্ছা না থাকলেও মায়ের কথায় বাধ্য হয়ে রায়চৌধুরীদের মেয়ের জন্মদিনের পার্টিতে যেতে হয় বিক্রম কেও। অন্যদিকে অনামিকা তার বাড়িতে ফিরলে দেখা যায় তার হাতের মধ্যে একটি কালো দাগ রয়েছে, যেটি প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার ভয়ে তার মা কাপড় দিয়ে সেটি ঢেকে দেয় এবং বলে ভবিষ্যতে যেন আরো সতর্ক হয় এটি ঢেকে রাখার বিষয়ে।
অনামিকা তার বন্ধুদেরকে যখন বিক্রমের কথা বলছিল আর বিক্রমকে প্যাঁচার মতো দেখতে বলছিলো তখনই দেখা যায় বিক্রম তার পিছনে এসে জিজ্ঞেস করে দেখুনতো পেঁচাটা এরকম দেখতে ছিল কিনা!
এইভাবে শেষ হয় পর্বটি। তবে সব মিলিয়ে রহস্য-রোমাঞ্চ মিলমিশ এই পর্বকে দেখে দর্শকরা বলছে ১০ এর মধ্যে অনায়াসেই ৯ দেওয়া যায়। বিশেষত অনামিকার হাতের দাগ, পোড়া পুতুল, ডেলিভারি বয়ের অদৃশ্য হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া এবং এয়ারপোর্টে অনামিকার প্রথম দেখা লোকটিকে আবার ঘাটে এক ঝলকের মতো দেখতে পাওয়া সবমিলিয়ে এক রহস্যে রোমাঞ্চের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এখন পরবর্তীতে কী দেখা যায় তা জানতে গেলে চোখ রাখতে হবে লালকুঠিতে।